Friday, June 14, 2013

"মুজিবকে জিয়া শ্রদ্ধা করতেন বলেই আওয়ামী লীগ নতুন জীবন পায় " || সংসদে পাপিয়া

 মুজিবকে জিয়া শ্রদ্ধা করতেন বলেই আ.লীগ নতুন জীবন পায় // সংসদে পাপিয়া
Mujib Zia BD Army
‘জিয়াউর রহমান শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল বলেই বিলুপ্ত ঘোষিত আওয়ামী লীগকে নবজীবন দান করেছিল’-

এমন মšত্মব্য করেছেন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে তিনি এ মšত্মব্য করেন।
‘জিয়া শেখ মুজিবের সঙ্গে বেঈমানি করেছে’- সরকার দলীয় সাংসদের এমন উক্তির জবাবে পাপিয়া বলেন, ‘পদোন্নিত পেয়ে জিয়াউর রহমান শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বেঈমানি করেনি। বেঈমানি করেছেন জেনারেল শফিউল্লাহ ও খন্দকার মোশতাকসহ তৎকালীন সময়ে যারা মুুজিবের রক্ষী বাহিনীর উপদেষ্টা ছিলেন। ওই সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগ ব্যাংক ডাকাতি করেছে। তারাই ওই সময় বিরোধিতা করেছে। জিয়াউর রহমান শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার কারণেই বিলুপ্ত ঘোষিত আওয়ামী লীগকে নবজীবন দান করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যখন ভারত থেকে বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিল জিয়াউর রহমান তখন অনুমতি দিয়েছিল এবং ১৬২ পৃষ্ঠার সিজার লিস্টসহ তার বাবার (বঙ্গবন্ধু) স্থাবর-অস্থাবর সম¯ত্ম সম্পত্তি হ¯ত্মাšত্মর করেছে। কিন্তু ওই দিন জিয়াউর রহমান দুটি জিনিসের দায়িত্ব নেন নি, সেগুলো হচ্ছে- দুটি অবৈধ অস্ত্র।’
বিএনপির সংসদ সদস্য পাপিয়া বলেন, ‘যারা জিয়াউর রহমানের বিরোধিতা করছেন তারা অন্ধকারের ঝোঁপঝারের ঝিঁ ঝিঁ পোকা। সশস্ত্র বিপ্লবের হোতা, সুযোগ সন্ধানী ধান্দাবাজ। যারা এক সময় শেখ মুজিবুর রহমানের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বানানোর কথা বলেছিলেন। সশস্ত্র বিপ্লবের নাম করে জামাল কামালকে ব্যাংক ডাকাত বলেছিলেন তারা।’
তিনি বলেন, ‘তারা জীবনে কখনো একটি বারও নির্বাচিত হতে পারেননি। যতবার নির্বাচন করেছেন, ২শ’ বেশি একটি ভোটও তারা পাননি। মেম্বার পর্যšত্ম হতে পারেননি। ষড়যন্ত্রের ভোটে জিতে আজকে ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন না। কারণ উনি হচ্ছেন ‘ছাগলের’ ১৫ নম্বর বাচ্চা।’
পাপিয়া তথ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেন, ‘আজ উনি জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করছেন, ১২ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী, রাষ্ট্রপতি জিয়া তাকে জেলখানা থেকে মুক্ত করেছিলেন। তৎকালীন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সমর সেনকে অপহরণ করা হয়েছিল। জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে এত বিষোদগার কারণ তারা সেদিন তারা দাবি তুলেছিল, ‘সিপাহী সিপাহী ভাই ভাই, অফিসারদের মাথা চাই।’ সেনাবাহিনীকে র‌্যাংকবিহীন সামরিক বাহিনীতে পরিণত করতে চেয়েছিল। বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার নাম দয়ে শত শত সামরিক অফিসারকে খুনের নেশায় মত্ত হয়েছিলেন তার প্রধান ছিলেন কর্নেল তাহের, তার ভাই ড. আনোয়ার আর তাদের সঙ্গে ছিলেন তথ্যমন্ত্রী। দিনের পর দিন সামরিক বাহিনীকে পর্যুদ¯ত্ম করার চেষ্টা করা হয়েছিল।
পাপিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত মহিলা আসনের একজন সংসদ সদস্য সংসদে বলেছেন, জিয়াউর রহমান নাকি ১১১৪ জন সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেছেন, কিন্তু তিনি একটি নামও বলতে পারেননি। সিপাহী সিপাহী ভাই ভাই, অফিসারের মাথা চাই, এ স্লোগান দিয়ে সেদিন কারা গ্রুপ ক্যাপ্টেন আনসার আহমেদ চৌধুরীকে কারা হত্যা করেছিল? তৎকালীন সময়ে ঢাকার বেইস কমান্ডারকে কারা হত্যা করেছিল? বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার তাকে কে হত্যা করেছিল? ফ্লাইং লেফটেন্যান্ট শওকত তাকে কে হত্যা করেছে? গ্রুপ ক্যাপ্টেন মাসুদের হত্যাকারী কারা? ট্রেজারি বেঞ্চে বসে আছেন আওয়ামীলীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য যার স্ত্রীর এক ভাইকে হত্যা করা হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে বলা হয় আমরা নাকি নিষিদ্ধ পল্লীর ভাষায় কথা বলি। জানি না, নিষিদ্ধ পল্লীর ভাষা কি? যারা সেখানে যান, তারা জানেন, যার মনে যা, ফাল দিয়া ওঠে তা। কলকাতার ভাষা বিজ্ঞানি পবিত্র সরকার, নির্মল দাসরাও বলছেন, চুদুরবুদুর কোনো খারাপ শব্দ নয় অবিলম্বে দৌলতদিয়া ঘাটে ট্রেনিং ইনষ্টিটিউট খুলে যাদের অল্প বিদ্যা তাদের বেশি বিদ্যা অর্জনে সেখানে যাওয়ার তাগিদ দেন বিএনপির এই সংসদ সদস্য।’



সৈয়দা আশিফা আশরাফি পাপিয়া বলেন, ‘তারেক রহমান সম্পর্কে সংসদে অশোভন বক্তব্য রাখা হয়। তারেক রহমানের বিদেশে বাবার বাড়ি নেই, কোনো খ্রিষ্টান, ইহুদি মেয়ে বিয়ে করা শ্বশুর বাড়িও নেই। মানিলন্ডারিং করে টাকা বিদেশে নেয়ার প্রয়োজন নেই তারেক রহমানের। তারেক রহমানের যা আছে তা দেশের মাটিতেই আছে। ইনকাম ট্যাক্সের ফাইলে তা তোলা আছে। বিদেশে ভাড়া বাসায় স্ত্রী কন্যা নিয়ে দিনাতিপাত করছে তারেক। কিন্তু বিদেশে সজিব ওয়াজেদ জয় ও পুতুল যে থাকছে তাদের বাড়ি ভাড়ার উৎস কী আমেরিকার ইনকাম ট্যাক্স ফাইলে তোলা আছে কী না সেগুলোও কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ জানতে চায়। ২০০৬ সালের ১২ মে ভার্জিনিয়ায় ৩৮১৭ বেলমন্ট কোর্টে ১০ লাখ ডলার খরচ করে একটি বাড়ি ক্রয় করেছেন সজিব ওয়াজেদ জয়। ভার্জিনিয়ার আলেক্সজান্দ্রিয়া শহরে ৪৮২৩ স্ট্রিটে ১০ লাখ ডলার ব্যয় করে আরেকটি বাড়ি ক্রয় করেছেন তিনি। ২০০৫ সালের পহেলা নভেম্বর ৪৫৬ ফ্লোরিডায় ৫ লাখ ডলার ব্যয় করে ৩ নম্বর বাড়িটি ক্রয় করেছেন সজিব ওয়াজেদ জয়। ২০০৪ সালে ১৬ অক্টোবর ৮৪৫ ফ্লোরিডায় সাড়ে ৫ লাখ ডলার ব্যয় করে ৫ নম্বর বাড়িটি ক্রয় করেছেন তিনি। ফ্লোরিডায় ৬ নম্বর বাড়িটি ৫ লাখ ডলার খরচ করেছেন তিনি ৬ নম্বর বাড়িটি ক্রয় করতে। এছাড়া ফ্লোরিডায় অঙ্গরাজ্যে আরো তিনটি বাড়ি আছে তার।’
সরকারের দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে পাপিয়া বলেন, ‘৭২-৭৫ এর ব্যাংক ডাকাতদের কবলে পড়ে দেশের ব্যাংকগুলো জামানত শূন্য ব্যাংকে পরিণত হয়েছে।’ এসময় তিনি সরকার দলীয়দের দুর্নীতির খতিয়ান তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘একজন বিশেষ ব্যক্তির চাচা পরিচয়দানকারী শরীয়তপুরের আওয়ামী লীগ নেতা জয়নুল শিকদার এমপি-মন্ত্রীদের প্রভাবে জামানত ছাড়াই ব্যাংক থেকে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। এছাড়া জামানত ছাড়াই নুরজাহান ভেজিটেবলকে দেয়া হয়েছে ১ হাজার কোটি টাকা।’
পাপিয়া বলেন, নামে মাত্র মর্টগেজ দিয়ে সরকার দলীয় একজন এমপি বুড়িগঙ্গার দখলকৃত জমি তার মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি মাইশা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের নামে ন্যাশনাল ব্যাক থেকে ১ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। কিন্তু আজ পর্যšত্ম এক টাকাও পরিশোধ করে নি।’
সালমান এফ রহমানকে দুর্নীতির দরবেশ আখ্যা দিয়ে বিরোধী দলের এই সাংসদ বলেন, ‘তার (সালমান) মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের জিএমজি এয়ারলাইন্স ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি চ্যানেলের বিপরীতে ৫শ’ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। একটি টাকাও পরিশোধ করে নি।’
পাপিয়া বলেন, ‘আওয়ামী বর্তমান এমপি হামিদ রিয়েল এস্টেটের মালিকের কাছে ব্যাংক পাওনা রয়েছে ১৭০ কোটি টাকা। একটি টাকাও শোধ করে নি।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের পৃষ্ঠপোষক শরিক দলের অর্থের যোগানদাতা চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপ বিনা জামানতে ৭টি প্রতিষ্ঠানের নামে ১৮শ’ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। পরিশোধের কোনো খবর নেই। এছাড়াও চট্টগ্রামের মোহাম্মদ আলী ও ইলিয়াস ব্রাদার্স জয়নুল শিকদারকে ঘুষ দিয়ে ৩৫০ কোটি টাকার ঋণ মওকুফ করে নিয়েছে।’
পাপিয়া বলেন, ‘আওয়ামী বাকশালীদের হরিলুটে দেশের ব্যাংকিং খাত আজ পথে বসেছে। ডেসটিনি নিয়ে এখন কিছু বলতে চাই না। কিন্তু বিসমিল্লাহ গ্রুপ প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. ইকবালের মাধ্যমে ১২শ’ কোটি লোপাট করেছে। আর এর হোতা খাজা সোলাইনকে সস্ত্রীক নিরাপদে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।’
এসময় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১৬ হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করে সেগুলোকে দেউলিয়া করে দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন বিরোধীদলীয় এই সাংসদ।
তিনি বলেন, ‘এত কিছু হচ্ছে অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন। এগুলো নিয়ে সাংবাদিকরা তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন- আমার (বিবি গভর্নর) বলার কিছু ছিল না, চেয়ে চেয়ে দেখলাম ৭২’র ব্যাংক ডাকাতরা ডিজিটাল কায়দায় ব্যাংক থেকে জামানত তুলে পালিয়ে চলে গেছে।’
পাপিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ শুধু গ্রাহকের ১৬ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেই ক্ষাšত্ম হয়নি। তারা ১০ বছরের ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। এ সময় তারা ২৩টি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়। বর্তমান সাড়ে ৪ বছরে ৯টি ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছে। একেকটি ব্যাংকের অনুমোদন নিতে বিশেষ ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে বিশেষ কাজে বিশেষ ব্যক্তির নির্দেশে ২০০ কোটি টাকা করে ঘুষ দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই বছর আইটিসিএস’র ২৫টি লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের শামীম উসমানের স্ত্রীর নামের প্রতিষ্ঠান কে টেলিকমকে দেয়া হয়েছে এই লাইসেন্স। এছাড়া একজন প্রতিমন্ত্রীর মেয়ের নামে পরিচালিত ‘রাতুল টেলিকম’কে দেয়া হয়েছে আরেকটি লাইসেন্স।’
পাপিয়া বলেন, ‘সরকারি দলের আরেক এমপি জিয়াউদ্দিন বাবুল সংসদীয় কমিটির কার্যবিধি লংঘন করে নিজের মেয়ের নামেও একটি লাইসেন্স করেছে।’
‘এর লাইসেন্স করেই থেমে যায় নি। এরা প্রতিদিন ৬ কোটি করে মিনিট চুরি করছে। আর এতে বিটিসিএল’র লোকসান হচ্ছে হাজার কোটি টাকা,’ যোগ করেন পাপিয়া।
তিনি বলেন, ‘বিটিআরসি এদেরকে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু এই চোরেরা কল চুরি বন্ধও করে না। চিঠির উত্তরও দেয় না।’
পাপিয়া বলেন, ‘চট্টগ্রামের সওদাগর একজন প্রতিমন্ত্রী চট্টগ্রামের ফিশিং লাইসেন্সগুলো তার নিজের পরিবারের নামে করে নিয়েছে। আর বাইরের কোনো লোককে দিয়ে থাকলে তা দিয়ে মোটা অংকের উৎকোচের মাধ্যমে। কিন্তু যারা সত্যিকারের মৎস ব্যবসায়ী তারা লাইসেন্স পায় নি।’
কুইক রেন্টালের লোকসান ২৫ হাজার কোটিতে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে পাপিয়া বলেন, ‘এতে প্রতি বছরে ৬ হাজার ৩০৫ কোটি ক্ষতি হচ্ছে। বিনা টেন্ডারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে দেয়ায় বছরে গচ্চা যাচ্ছে ৭ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা।’
তিনি বলেন, ‘পত্রিকার শিরোনাম হচ্ছে- একজন মন্ত্রীর পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ‘সামিট’র কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ খাত। প্রতিষ্ঠানটি একাই বিনামূল্যে ৫৭ ভাগ টেন্ডারের কাজ নিয়ে নিয়েছে।’
পাপিয়া বলেন, ‘নিজেরা তদবির করে কিছু পয়সার বিনিময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ নিয়েছে। এরা হচ্ছে- বাংলাদেশের দাদন ব্যবসায়ী বরকত উল্লাহ, অটোবি ফার্নিচার এবং এনা প্রপার্টিজ।’
‘এই এনা প্রপার্টিজের মালিক যেখানে কাজ দেখে সেখানেই মাথা ঢুকিয়ে দেয়। টাকা তুলে নেয়। কিন্তু কাজ করে না। যে ব্যক্তি শুরুই করে না, তিনি শেষ কীভাবে করবে?’ যোগ করেন পাপিয়া।’

No comments:

Post a Comment