Tuesday, July 16, 2013

বাংলাদেশের মিডিয়া


বাংলাদেশের মিডিয়া বরাবরই সরকার এবং নাস্তিকদের পক্ষে কথা বলে। ছবিটিতে পরিস্কার দেখা যাচ্ছে যে, কয়েকজন পুলিশ সদস্য সাধারণ মানুষকে লক্ষ করে গুলি করছে, অথচ মিডিয়া বলে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়েছে।

বাংলাদেশের মিডিয়ায় বিপ্লব ঘটে গত জোট-সরকার আমলে। গন্ডায় গন্ডায় টিভি চ্যানেল আর পত্রিকা খোলা হইতে থাকে। একে একে বেশ কয়েকটা মিডিয়া গ্রুপও গড়ে ওঠে।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালু পর পর দুইটা টিভি চ্যানেল- এনটিভি ও আরটিভি এবং একটি পত্রিকা- দৈনিক আমারদেশ বের করেন।
বিএনপির শীর্ষনেতা সাদেক হোসেন খোকার নেতৃত্বাধীন একটি ব্যবসায়ী গ্রুপ বাংলাভিশন, বিএনপির আরেক শীর্ষনেতা ও ঢাকাব্যাংকের অন্যতম পরিচালক মির্জা আব্বাস বৈশাখী টিভি, বিতর্কিত ব্যাবসায়ী গিয়াসউদ্দীন আল মামুনের চ্যানেল ওয়ান, বিএনপির নেতা ও সাবেক সাংসদ সাঈদ ইস্কান্দারের ইসলামিক টিভি প্রভৃতি চ্যানেলগুলো তাদের সম্প্রচার শুরু করে।
জোট-সরকারের শেষদিকে সম্প্রচারে আসে বিএনপি নেতা ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সালাহউদ্দীন কাদের চৌধুরীর সিএসবি নিউজ, জামায়াত নেতা ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত মীর কাশেম আলীর দিগন্ত টিভি।
জোট-সরকারের আমলে সম্প্রচার নীতিমালা ভঙ্গের দায়ে বন্ধ করে দেয়া হয় একুশে টেলিভিশন। যদিও প্রকৃত কারণ ছিল বিএনপির একটি অনুষ্ঠান প্রচারে অপারগতা প্রকাশ।
জোট-সরকারের শেষদিকে আরো অনুমতি দেয়া হয় বিতর্কিত ব্যাবসায়ী নুরুল ইসলাম বাবুলের যমুনা নিউজ, চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও আওয়ামীলীগ নেতা মহিউদ্দীনের সোনার বাংলা টিভি এবং আওয়ামীলীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীর দেশ টিভিকে।
এর মধ্যে সম্প্রচার স্বত্ব নিয়ে সমস্যায় পড়ে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত মহিউদ্দীনের সোনারবাংলাটিভি ও সরকারের সাথে ঝামেলায় মাঠে মারা যায় যমুনা গ্রুপের চ্যানেলটি।
এছাড়া এসময় বেশ কয়েকটি পত্রিকাও প্রকাশ পায়- যমুনা গ্রুপের যুগান্তর, হামীম গ্রুপের সমকাল, দিগন্ত গ্রুপের নয়াদিগন্ত ইত্যাদি। এছাড়া শফিক রেহমানের যায়যায়দিনে বিএনপির এম মোর্শেদ খানের বিনিয়োগের কথা থাকলেও তিনি আর তা করেননি। এরপরেও যায়যায়দিন দৈনিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

এরই মধ্যে আসে এক-এগারো। বদলে যায় সব পরিস্থিতি। সেনাবাহিনী সমর্থিত এক সরকারের ধরপাকড়ের মুখে পড়ে টিভি চ্যানেলগুলোর মালিকানা বদলাতে থাকে। আরটিভি কিনে নেয় আওয়ামীলীগপন্থী বেঙ্গল গ্রুপ, বৈশাখী কিনে নেয় ডেসটিনি ২০০০।-  বন্ধ করে দেয়া হয় দেশের প্রথম ২৪ ঘন্টার সংবাদ চ্যানেল সিএসবি নিউজ। শফিক রেহমানকে একপ্রকার কোনঠাসা করে, ভয়ভীতি দেখিয়ে যায়যায়দিন থেকে বের করে দেয়া হয়। একসময় দেশের দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক আমারদেশের মালিকানা নিয়ে সঙ্কট দেখা দেয়।
এই বিশেষ পরিস্থিতিতে অপেক্ষাকৃত নিরপেক্ষ বলে পরিচিত এটিএন বাংলা এবং চ্যানেল আইও তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে। এটিএন বাংলা যুদ্ধাপরাধের উপর বিস্তৃত কাজ করে জামায়াতকে কোণঠাসা করে ফেলে এবং দেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষের শক্তিকে পুনরোজ্জীবিত করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। তবে এসময় চালু হয় একুশে টিভি, নতুন পরিচালক আব্দুস সালামের হাত ধরে।

২৮ ডিসেম্বর আওয়ামীলীগের বিজয়ের পরপরই মিডিয়া ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। আওয়ামীলীগপন্থী ব্যবসায়ীরা রীতিমত গ্রুপ খুলে বসেন। বর্তমানে বাংলাদেশে যে সকল চ্যানেল আছে সেগুলো হয় আওয়ামীলীগপন্থী, নয়তো সুবিধাবাদী ব্যবসায়ীদের দ্বারা পরিচালিত। বেশ কয়েকটি পত্রিকা ও চ্যানেলের দায়িত্বে সাংবাদিক নেতারাও আছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- জাতীয় প্রেসক্লাবে আওয়ামীলীগপন্থী প্যানেল থেকে নির্বাচন করে পরাজিত গোলাম সরোয়ার আছেন সমকালের সম্পাদক হিসেবে, আওয়ামীলীগপন্থী শাহ আলমগীর আছেন স্কয়ার গ্রুপের মাছরাঙ্গার দায়িত্বে, আওয়ামীলীগ পক্ষের সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল আছেন বৈশাখী টিভিতে, আওয়ামীলীগপন্থী বর্ষীয়ান সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী আছেন আমাদেরসময়ের সম্পাদক হিসেবে।
দেশে সম্প্রচারিত চ্যানেলগুলোর মালিকদের মধ্যে আছেন- স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ছোটভাইয়ের চ্যানেল নাইন, সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের সময়টিভি, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি, রংপুর থেকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী মাহফুজুর রহমানের এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজ, সাবের হোসেন চৌধুরীর দেশটিভি, বেঙ্গল গ্রুপের আরটিভি, ইনসেপ্টার চ্যানেল আই, স্কয়ারের মাছরাঙ্গা, আইন প্রতিমিন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলামের ভাইয়ের চ্যানেল একাত্তর, ঢাকা-১৪ এর সাংসদ আওয়ামীলীগ নেতা কামাল আহমেদ মজুমদারের মোহনা টিভি, রফিকুল আমীনের ডেসটিনি ২০০০ এর বৈশাখী টিভি প্রভৃতি।
এছাড়া প্রিন্ট মিডিয়াতেও একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ আছে আওয়ামীলীগ ও মহাজোটের দেশের সবচেয়ে বড় দুটি পত্রিকা ও ম্যাগাজিন সাপ্তাহিক ২০০০-এর মালিক ট্রান্সকমের লতিফুর রহমান। এই প্রকাশনাগুলোর সম্পাদকেরা ছাত্র জীবনে জাসদ করতেন।
আছে সুবিধাভোগী বসুন্ধরার কালেরকন্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, the daily sun, Diplomat's Journal।
সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকোর the independent, একে আজাদের হামীম গ্রুপের দৈনিক সমকাল, আওয়ামীলীগের গত আমলের কুখ্যাত ভূমিদস্যু নুরুল ইসলাম বুলবুলের যুগান্তর, আওয়ামীলীগপন্থী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এইচআরসি গ্রুপের যায়যায়দিন, ডেসটিনি গ্রুপের দৈনিক ডেসটিনি, বিগত আওয়ামীলীগ আমলের মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর ইত্তেফাক ও The New Nation।

এভাবে দেশের সকল মিডিয়া কব্জা করে রেখেছে রাজনীতিবিদেরা আর বঞ্চিত করছে সাধারণ জনগণকে সঠিক সংবাদ জানা থেকে।

No comments:

Post a Comment